Log In

প্রতিরোধই এইডস থেকে বাঁচার উপায়

প্রতিরোধই এইডস থেকে বাঁচার উপায়

মোঃ আমিরুল ইসলাম
এইডস হলো এক ধরণের ব্যধি, যাকে মরণব্যধিও বলা হয়। যে জীবাণুর মাধামে এইডস হয় তাকে এইচআইভি বলা হয়। এইচআইভি ভাইরাস রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে অনেকেরই জানা আছে। তবে সমাজের প্রতিটি স্তরে আজও গড়ে ওঠেনি সচেতনতা। এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণের রোগ এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৮৮ সাল থেকে সারা বিশ্বে ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস পালন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও দিবসটি পালনে নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে চলতি বছর এ পর্যন্ত এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। এর আগে কোনো বছর এত রোগী শনাক্ত করা হয়নি। চলতি বছর মৃত্যু হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ জনের। এর আগে গত বছর ২০২২ সালে দেশে এইচআইভি ভাইরাসজনিত রোগ এইডসে মৃত্যু হয়েছিল ২৩২ জনের। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্যানুসারে, সারা বিশ্বে এইচআইভি আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা চার কোটি ৫০ লাখ ৫৭ হাজার প্রায়। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৫ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম। তবে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। কারণ এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই ঘৃণার চোখে দেখে বলে আক্রান্ত ব্যক্তি রোগের কথা গোপন রাখে। ফলে সহজে রোগ ছড়ায়।
এইডসের লক্ষণ: এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত রোগীর শুরুতে সাধারণত কোনো লক্ষণ থাকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং বিভিন্ন রোগ দেখা দেয় এক পর্যায়ে পরীক্ষার মাধ্যমে এইচআইভি শনাক্ত করা হয়। এই ভাইরাসের কারণে যে রোগটি হয়, তা হলো তা হরো অ্যাকোয়ার্ড ইমিউন ডিফেসিয়েন্সি সিনড্রোম বা এইডস। আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগটির লক্ষণগুলো অনেক পড়ে প্রকাশ পায়। দেখা গেছে, এই রোগটি প্রকাশ পেতে আট থেকে ১০ বছর সময় লাগে। কেউ যদি নিজে চিকিৎসকের কাছে যায় এবং জানায় যে তার অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক রয়েছে, সে ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো প্রকাশ না পাওয়ার কারণে চিকিৎসকের কাছে রোগীরা অনেক দেরি করে আসে। আরেকটি বিষয় হলো, মায়ের থেকে এইচআইভি যদি বাচ্চাদের ছড়ায়, তাহলে আমরা বাচ্চাদের স্ক্রিনিং করি। যদি বাচ্চারা নেগেটিভ হয়, তাহলে তো তাদের কোনো ঝুঁকি নেই। বিভিন্ন চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে, এর মাধ্যমে নেগেটিভ হতে পারে। তবে আমরা যেহেতু জানি, আক্রান্ত মায়ের কাছ থেকে হচ্ছে, তাই আমরা আগেভাগে নির্ণয় করতে পারি।
এইডসের সচেতনতা ও প্রতিরোধ: এইচআইভি সংক্রমণের উপায়গুলো জেনে এ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এইডস প্রতিরোধ সম্ভব। এতে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা হলো- ১) ইনজেকশন নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবারই নতুন সুচ/সিরিঞ্জ ব্যবহার করা; ২) অন্যের রক্ত গ্রহণ বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আগে রক্তে এইচআইভি আছে কি না পরীক্ষা করে নেয়া; ৩) অনিরাপদ যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা; ৪) স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো নারী বা পুরুষের সাথে দৈহিক সম্পর্কের সময় কনডম ব্যবহার করা; ৫) এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের সন্তান গ্রহণ বা সন্তানকে বুকের দুধ দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া; ৬) কোনো যৌন রোগ থাকলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া; ৭) অন্যের ব্যবহার করা ব্লেড ব্যবহার না করা এবং ৮) ধর্মীয় ও নৈতিক অনুশাসন মেনে চলা।
এইচআইভির প্রতিরোধের মূল উপাদান হলো শিক্ষা, সচেতনতা, ঝুঁকির মাত্রা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও ধারণা। মানুষের চিন্তায় ও আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।

সময়ের বাণী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *