Log In

সার্ভেয়ার মনিরকে রুখবে কে? সে এখন শত কোটি টাকা ও বিপুল সম্পদের মালিক! তোয়াক্কা করেন না মন্ত্রীকেও! – অনিয়ম ও দুর্নীতি পর্ব-১

সার্ভেয়ার মনিরকে রুখবে কে? সে এখন শত কোটি টাকা ও বিপুল সম্পদের মালিক! তোয়াক্কা করেন না মন্ত্রীকেও! – অনিয়ম ও দুর্নীতি পর্ব-১

নিজস্ব প্রতিবেদক
ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার, জাতীয় বেতন স্কেলের ১৪তম গ্রেডের কর্মচারী। বেতন সবমিলিয়ে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা। এই বেতনের একজন ব্যক্তি যদি ২০ বছর চাকরি করেন, তারপরও বেতন-বোনাস মিলিয়ে আয় ৭০ লাখ টাকাও হবে না। পারিবারিক ব্যয়ের হিসাবটা না হয় বাদই দেওয়া হলো।
অথচ ১৪তম গ্রেডের সরকারি এ কর্মচারীর সম্পদের পরিমাণ শুনলে যে কারও মাথা ঘুরে যাবে। রাজধানীর বহুতল ভবনে সাতটি ফ্ল্যাট, আছে ২০ কাঠার অধিক জমি। সর্বসাকুল্যে মাসিক বেতন ৩০ হাজার টাকা হলে কীভাবে এ সময়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলা সম্ভব? হয়তো আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের ছোঁয়ায় তিনি শতকোটি টাকা ও বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন!
বলছি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত সার্ভেয়ার মনির হোসেনের কথা। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কৃষ্ণপুরে। আগে ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এল এ শাখায় কর্মরত ছিলেন। সেখানে চাকরির তিন বছরের মাথায় দুর্নীতির অভিযোগে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বদলি করা হয়। কিন্তু অবৈধ অর্থ ও ক্ষমতার জোরে আবারও ঢাকায় বদলি হয়ে আসেন তিনি। অর্থ-সম্পদের দাপটে সে এখন মন্ত্রীকেও তোয়াক্কা করেন না। একাধিক বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
মনির হোসেনের সম্পদের খোঁজে কর অফিস, রাজউক, ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রার অফিস, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকসহ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সব নথিপত্র এখনও হাতে পাওয়া যায়নি। তবে, আমাদের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে অনেক সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।
মনিরের অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে- গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কৃষ্ণপুরে একতলাবিশিষ্ট আলিশান বাড়ি, রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকায় ১০তলা রোজ গার্ডেন ভবনে একাধিক ফ্ল্যাট, ডেমরার হাজি বাদশা মিয়া রোডে গ্রিন কটেজ- ১ ও গ্রিন কটেজ- ২-এ তিনটি ফ্ল্যাট, একই এলাকায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের পাঁচ কাঠার প্লট, সাত কাঠা জমিতে নির্মিত ২০টি দোকান এবং একই এলাকায় গ্রিন কটেজ- ৩ ও গ্রিন কটেজ- ৪ ভবনে একাধিক ফ্ল্যাটের বুকিং রয়েছে বলে জানা গেছে।
অবৈধ সম্পদের মধ্যে আরও রয়েছে- রায়েরবাগে চান্দিনা ভিলেজে জমি, একই এলাকার মিন্টু চত্বরের পাশে সহকর্মী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সার্ভেয়ার বশির ও তার (মনির) নামে ২০ কাঠা জমি।
দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত এসব সম্পদ নিজের নাম ছাড়াও স্ত্রী, শ্যালক ও ভায়রা, এমনকি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নামেও গড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা পোস্টের অনুসন্ধানেও তিনি এবং তার আত্মীয়দের নামে কয়েকটি ফ্ল্যাট ও জমি থাকার সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে, দুর্নীতির মামলা থেকে বাঁচতে অধিকাংশ সম্পদ আত্মীয়দের নামে গড়েছেন বলে জানা গেছে।
সার্ভেয়ার মনিরের অঢেল সম্পদের খোঁজে এরই মধ্যে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত ১৫ মে তলব করে সার্ভেয়ার মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদও করে সংস্থাটির অনুসন্ধান কর্মকর্তা। যদিও জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের অধিকাংশ বিষয় তিনি অস্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে অর্জিত সম্পদ নিজের নয় বলে দাবি করেন মনির।
এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনসংযোগ দপ্তরে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পরে জনসংযোগ দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে ‘অবগত নন’ বলে জানান। অন্যদিকে, সার্ভেয়ার মনিরকে কল করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে কোনো জবাব পাওয়া না পেয়ে তার নবাবগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসে গেলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে প্রমাণ করে দেখান। এসবকে আমি ভয় পাই না। এসব কতো দেখলাম।

এবিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আঃ হালিম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিষটি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সময়ের বাণী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *