Log In

সেপ্টেম্বরেই সরকারের পতন!

সেপ্টেম্বরেই সরকারের পতন!

আমিরুল ইসলাম অমর :

সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষ। কয়েক মাস পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আসন্ন এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে আছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপি। ঈদের পর বিএনপি তাদের চলমান যুগপৎ আন্দোলনকে চাঙ্গা করতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে। বিশেষ করে ঢাকার রাজপথ দখলে নিতে মরিয়া দলটি। আন্দোলন ঢাকামুখী করতে তৃণমূল থেকে ঢাকা অভিমুখী কর্মসূচি দেওয়া হবে। সমাবেশ কিংবা মানববন্ধনের বদলে দাবি আদায়ে হরতাল, অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচি কিংবা ঘেরাওয়ের ডাক আসতে পারে। এছাড়া আন্দোলন সফল করতে ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ারও পরিকল্পনা আছে দলটির। মধ্য জুলাই থেকে এক দফার ভিত্তিতে লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো। সেপ্টেম্বর মাসেই সরকারের পতন নিশ্চিত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় দলটি। বিএনপির একাধিক সূত্র থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির হাইকমান্ড বলছে, আমরা সরকারকে অনেক সময় দিয়েছি, আর নয়। এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। এজন্য দলের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। তফসিল ঘোষনার আগেই এই সরকারের পতন নিশ্চিত করা হবে। সেই টার্গেটেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, সেপ্টেম্বর মাসেই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে পারবো। তারা বলেন, সরকারের পাতানো খেলায় পা না দেয়াই এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। গণ-অভ্যুত্থান কিংবা সরকারের পতন কখনো সময় নির্ধারণ করে হয় না। তাই সর্বাত্মক প্রস্তুতি থাকলে পতন আন্দোলন বেশি সময় লাগবে না।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, এই সরকারকে বাধ্য করতে হলে মাঠের আন্দোলন আরও জোরালো করতে হবে। এসব হাজারো সমাবেশ কিংবা অনশন দিয়ে কোনো কাজ হবে না। সরকারকে সরাতে হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘট, অবস্থান, ঘেরাওয়ের কোনো বিকল্প নেই। মাঠ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সরকার পতনে বড় আন্দোলনের জন্য তারা প্রস্তুত আছেন। এখন আর ছোট ছোট সমাবেশ কিংবা মানববন্ধনে তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। তাদের প্রত্যাশা কেন্দ্র থেকে দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। তারা বলেন, আর আমরা সময়ক্ষেপণ করতে চাই না। এক দফার আন্দোলন চাই। বিএনপি এবার তার নিজস্ব শক্তি নিয়ে আন্দোলন করবে। আশা করি, কেন্দ্র খুব দ্রুতই একটি চূড়ান্ত আন্দোলনের রোডম্যাপ দেবে।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, এই সরকার খুব বেশি হলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে। সেপ্টেম্বরের পর আর এ সরকার থাকবে না। অত্যন্ত আস্থার সঙ্গেই তিনি ওই কথাগুলো বলেন। তিনি আরো বলেন, সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি ও নৈরাজ্যে দেশের মানুষ দিশেহারা। কাজেই এ সরকারকে বেশি সময় দেওয়া হবে না। ঈদের পর থেকেই আন্দোলন শুরু হবে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন। তিনি এও বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সরকারের বিদায় নিশ্চিত করা হবে।
সূত্রমতে, আন্দোলনের এক দফা চূড়ান্ত করতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি পরপর দুইটি বৈঠক করেছে। আন্দোলনের সাথে যুক্ত দলগুলোর পরামর্শ নিয়ে এক দফা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি পয়েন্ট যুক্ত করে এই এক দফা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি; মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার; ফরমায়েশি সাজা বাতিল; নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।
বিএনপি সূত্র জানায়, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে এক দফার ভিত্তিতে লাগাতার যুগপৎ আন্দোলন শুরুর পর প্রথম ধাপে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচিই থাকবে। শুরুর দিকেই হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কোনো কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি ও সরকার বিরোধীরা। তৃণমূল ও কেন্দ্রে আবারো গণসমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, পদযাত্রা, গণ-অবস্থান, মানববন্ধন, গণমিছিলের মতো কর্মসূচি পালিত হবে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন হবে ঢাকামুখী। সে ক্ষেত্রে ‘চলো চলো ঢাকা চলো’, ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, ঢাকায় অবস্থানের মতো কর্মসূচি আসবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। দলটির সেই আন্দোলন স্বল্প সময়ের হবে বলেও একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সেই একদলীয় বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে যার শুরু। এই আওয়ামী লীগের পক্ষে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। চলমান আন্দোলনের একটাই টার্গেট এই সরকারের পতন। বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। একবার বিনা ভোটে, একবার রাতের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। এবার আর তা হবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, অক্টোবরের দিকে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হবে। এসব মাথায় রেখেই আমরা কর্মপরিকল্পনা করছি। কয়েকদিন পর ঈদ। এরপর আগস্ট মাস। সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা কর্মসূচি দিচ্ছি। তিনি বলেন, দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা আসবে সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে। তখন হয়তো কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন হবে। কারণ আন্দোলনের চাহিদা বেড়ে যাবে। সরকার দাবি না মানলে বাধ্য হয়েই নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন করতে হবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। পিছু হটার সময় নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, বেগম জিয়াকে মুক্তি দেন। তারেক রহমানকে দেশে আসতে দিন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনে সহযোগিতা করুন। পার্লামেন্ট ভেঙে দিন। আর তা যদি না করেন তাহলে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন, সম্মান নিয়ে বিদায় নিতে পারবেন না। এটা যদি আপনার মাথায় না আসে তাহলে অসম্মানজনক পরিস্থিতি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে ভয়ংকর ও ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে যে কারণে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে, দেশের জনগণ এক সাগর রক্ত দিয়েছেন, লাখ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন- তাদের অসম্মান করা হবে। এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে এই সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। এবার আমাদের আন্দোলনের টার্গেট হচ্ছে এই সরকারের পতন নিশ্চিত করা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারলেই এ সংকট কেটে যাবে।
জানা মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফার ভিত্তিতে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত যুগপৎভাবে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। তবে ঈদের পর থেকে বিএনপি এককভাবে কর্মসূচি পালন করছে। সর্বশেষ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরে পদযাত্রার কর্মসূচি পালন করে দলটি। এ দিকে বিএনপির কর্মসূচির মধ্যেই ঢাকাসহ দেশের ছয়টি বড় শহরে ১১ দফার ভিত্তিতে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করছে দলটির প্রধান তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। আন্দোলনে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারুণ্যের এই সমাবেশ শুরু হয়েছে। আগামী ২২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে। বিএনপির কর্মসূচির পাশাপাশি শরিকরাও নিজ নিজ ব্যানারে কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছে।

সময়ের বাণী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *