Log In

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে অনৈতিক কাজ করছেন জাহাঙ্গীর : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সতর্কতা

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে অনৈতিক কাজ করছেন জাহাঙ্গীর : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নিজেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করে বেড়াচ্ছেন মো. জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যক্তি। তবে তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়েছে। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, জাহাঙ্গীর আলম নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহারখিল গ্রামের মৃত রহমত উল্যাহর ছেলে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জাহাঙ্গীর থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনে নিকটস্থ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা চিনতেন পানি জাহাঙ্গীর হিসেবে। তবে তিনি গতকাল বুধবার (৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবেই সব জায়গায় পরিচয় দিয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে নোয়াখালী থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, ৯০ দশকের দিকে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়ি সুধাসদনে আসা দলীয় নেতা-কর্মীদের পানি খাওয়ানোর কাজ করতেন জাহাঙ্গীর আলম। নোয়াখালী থেকে আসা এই জাহাঙ্গীরকে নেতা-কর্মীরা তখন থেকে ‘পানি জাহাঙ্গীর’ নামে চিনতেন। তিনি নেতা-কর্মীদের মাঝে পরিচিতি লাভ করেন ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর থেকে। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে শেখ হাসিনার খাদ্য বহনকারী হিসেবে ‘টিফিন ক্যারিয়ার’ তিনি নিজ হাতে রাখতেন বলেও জানা গেছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর এক বিশেষ সহকারীর (বর্তমানে এমপি) মাধ্যমে গণভবনে যাতায়াতের সুযোগ পান জাহাঙ্গীর। ঢাকার ইপিজেডে ২০০৯ সালে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। দলীয় নেতা-কর্মীরা ঝুট ব্যবসায় হাত দিলে জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী পরিচয়ে ফোন করে সরাসরি তাদের প্রাতি নিষেধাজ্ঞা জারি করতেন। এই ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয় করেছেন তিনি। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি এবং মন্ত্রীদের কাছে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী পরিচয় দিয়ে তদবির করতেন। চাকরি দেওয়ার নামে ও সরকারি টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে বিপুল টাকা আয় করেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগের দুর্দিনের অনেকেই তাকে পানি জাহাঙ্গীর বলেই সম্বোধন করেন।
নিজ এলাকা নোয়াখালী-১ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি জাহাঙ্গীর। তিনি এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার জন্য মাঠে রয়েছেন। গতকাল বুধবার পর্যন্ত তিনি এলাকায় নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন।
নোয়াখালী-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এইচএম ইব্রাহীম। যিনি এবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করছেন।
নোয়াখালীর চাটখিলে মো. জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর এপিএস পরিচয় দিতেন। এ পরিচয় দিয়ে তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির সহসভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। এ ছাড়া এলাকায় চাকরি-বাণিজ্য, কমিশন- বাণিজ্য, প্রাইভেট বিদ্যালয় দখল, জমি দখল,
ইটভাটা দখল, টেন্ডারসহ সন্ত্রাস চলতো তার নামে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর
কার্যালয়ের হুমকি দিয়ে অনিয়ম করে বেশ কয়েকজনকে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করান। জাহাঙ্গীর আলম তার ভাগনে শিপনের মাধ্যমে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন বলে অভিযোগ আছে। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনাকে বাঁচানোর গল্প বলে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিতেন। ওই পরিচয় দিয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করতেন। কিন্তু অবশেষে জাহাঙ্গীরের ছলচাতুরীর অবসান করেছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জাহাঙ্গীর থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মো. জাহাঙ্গীর আলম, পিতা. মৃত রহমত উল্যাহ, গ্রাম: নাহারখিল, ইউনিয়ন: খিলপাড়া, উপজেলা: চাটখিল, জেলা: নোয়াখালী, নিজেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করে বেড়াচ্ছেন। তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।

সময়ের বাণী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *