Log In

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে নিয়োগ বাণিজ্যের মহোৎসব! মূলহোতা রেজাউল ও লোকমানগং

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে নিয়োগ বাণিজ্যের মহোৎসব! মূলহোতা রেজাউল ও লোকমানগং

সময়ের বাণী ডেস্ক:
জনসংখ্যার হার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা এবং সে লক্ষে ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসমূহ পরিচালনা করতেই মূলত গঠন করা হয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। এর বাইরেও অসংখ্য কাজ রয়েছে এ কর্তৃপক্ষের। বস্তুত তা জানা থাকলেও কার্যত হচ্ছে তার উল্টো। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এখন অনিয়ম-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত লুটতরাজদের আঁতুড় ঘর বলেও দাবি করছে একাধিক সূত্র। নিয়োগ, বদলী, পদোন্নতি, টেন্ডার, কেনাকাটা; কোথায় নেই অনিয়ম ও দুর্নীতি। কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন এবং কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট মিলে নিয়োগ বানিজ্যের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে। নিয়োগ বানিজ্যের ডালপালা এখন দেশব্যাপী বিস্তৃত। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে সারা দেশ থেকে দালাল চক্রের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদনকৃত প্রার্থীদের নিকট হতে পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেয়ার নাম করে ৩-৫ লক্ষ ও ভাইভাসহ প্যাকেজ বাবদ ১৫-২০ লক্ষ করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

                                                পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব নিয়োগ বাণিজ্যে অন্যতম মূল হোতা সদ্য বহিস্কৃত পরিচালক (প্রশাসন) খান মো. রেজাউল করিম, বর্তমান পরিচালক (প্রশাসন) এ এইচ এম লোকমান ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের একান্ত সহকারী এনামুল হক, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু নূর সামসুজ্জামান ও সাবেক উপপরিচালক (পার্সোনাল) আবু তাহের সানাউল্লাহ নূরী। এদের সঙ্গে জড়িত আছে প্রশাসন শাখার উচ্চমান সহকারী মোঃ আমিনুল্লাহ ও দালাল নূর প্রফেসর। দালাল নূর প্রফেসর চাকরী প্রার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষা সনদের মূল সার্টিফিকেট কপি নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে কেউ টাকা দিতে না পারলে তাদের সার্টিফিকেট আর ফেরত দেয় না। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে এদের শেল্টার দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব আজিজুর রহমান। স্বাস্থ্য মন্ত্রী নিজেও নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত আছে বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। বিশেষ করে এই নিয়োগ বাণিজ্যের অন্যতম মূল হোতা খান মো. রেজাউল করিম। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু এই সিন্ডিকেটকে নানাভাবে শেল্টার দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। নিয়োগ বানিজ্যের এই সিন্ডিকেটের সদস্য কাজী মাহাবুব হাসান, অটো সাইদুর, অর্থ বিভাগের আজিজ এবং উন্নয়ন বাজেট বরাদ্ধের মাযহারুল ইসলাম নিয়োগ বানিজ্যের পাশাপাশি সারা দেশ থেকে বিকাশের মাধ্যমে বাজেট বরাদ্দ এবং উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা সুকৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তুলেছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কারো কারো রয়েছে একাধিক ব্যবসা বানিজ্য।

         নিয়োগ বাণিজ্যের মূলহোতা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (প্রশাসন) খান মো. রেজাউল করিম

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ভুয়া নাগরিকত্ব সনদ দাখিল করে টেলিটকের সাথে যোগসাজসে ঢাকা জেলায় ১৬৫ জন, চট্টগ্রাম জেলায় ৯০-৯৫ জন, সিলেট বিভাগে বিভিন্ন জেলার নাম ব্যবহার করে প্রায় ৮৫ জন চাকরি প্রার্থীর আবেদন পত্র ঢোকানো হয়েছে। এরা রীতিমত লিখিত পরীক্ষায় সাদা খাতায় অংশগ্রহন করে পাস করেছে এবং পরবর্তীতে ভাইভা বোর্ডেও অংশগ্রহণ করেছে। প্রকৃতপক্ষে ভাইভা বোর্ডে তাদের প্রকৃত সনদ যাচাই বাছাই করা হয় নাই। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের আগে এসব সনদ প্রকৃতভাবে যাচাই-বাছাই না হলে দুর্নীতিবাজরা প্রায় ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিবে। সেক্ষেত্রে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের প্রকৃত বাসিন্দারা চাকরি না পেয়ে ভুয়া সনদ ধারীরা।
জানা যায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ১০৮০ জন নিয়োগের কথা বলা হয়েছে, অথচ সাদা খাতায় টিকিয়েছে ২০০০ এর উপরে। নিয়োগ যাচাই কমিটি-ডিপিসি সভার এক রেজোলেসনে ১০৮০ জন এর বাইরে আরো অতি: ৪৫০ জন অপেক্ষমান তালিকা থেকে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনী। কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে এই সিন্ডিকেট হোটেল ওয়েস্টিনসহ বিভিন্ন নামিদামি হোটেলে নিশিরাতে একাধিকবার মিটিং করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

                                   পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বর্তমান পরিচালক প্রশাসন এ এইচ এম লোকমান

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু নূর সামসুজ্জামান পুরো নিয়োগ বাণিজ্যের গডফাদার হিসেবে খ্যাত। আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে তিনি নিয়োগ বাণিজ্যের সকল কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে বিশ^স্থ সূত্রে জানা গেছে। এদের সাথে জড়িত আছে সাবেক উপপরিচালক (পার্সোনাল) আবু তাহের সানাউল্লাহ নূরী। নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে তাকে বদলী করা হয়েছে। বদলী হওয়ার আগেই তিনি সুকৌশলে সাদা খাতায় তার নিজের প্রায় ৩৫০ জন প্রার্থীকে পাশ করিয়ে গেছেন। এই নিয়োগ বাতিল করা না হলে তিনি কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিবেন অনায়াসে। বদলী হয়েও এখনো তিনি নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছেন।

        স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু নূর সামসুজ্জামান (নিয়োগ বাণিজ্যের আরেক মূল হোতা)

সূত্রমতে, অধিদপ্তরের মূল ভবনের সামনে একজন চা বিক্রেতার ৩/৪ টি স্টল রয়েছে। এই দোকানীও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ‘নিরাপত্তা প্রহরী’ পদে উত্তীর্ণ প্রার্থী প্রভাবশালী সিবিএ নেতার আশীর্বাদপুষ্ট বলে জানা গেছে। সম্প্রতি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ‘পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা’ পদে প্রশিক্ষনার্থী ৬ জন প্রার্থীর কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয়ার একটি লিখিত অভিযোগ দূর্নীতি দমন কমিশনে জমা পড়েছে। উক্ত অভিযোগ পত্রে ৬ জন প্রার্থীর রোল নম্বর সম্বলিত আবেদন রয়েছে। উক্ত লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করা প্রার্থীগণ হলেন- সোনিয়া সুলতানা; রোলঃ ৫১০০৫৪৭০৬, অদিতী বিশ্বাস; রোলঃ ৫১০০৫১৮১৫ (মৌখিক পরীক্ষাঃ ০১/০৬/২০২৩), সুমাইয়া পারভীন ইশা; রোলঃ ৫১০০৫৪৫৭৭ (মৌখিক পরীক্ষাঃ ১/৬/২০২৩, সকাল), খাদিজা খাতুন; রোলঃ ৫১০০৪৮৬৯০ (মৌখিক পরীক্ষাঃ ১/৫/২০২৩ বিকেল), বৃষ্টি খাতুন; রোলঃ ৫১০০৫২১৪ (মৌখিক পরীক্ষাঃ ১/৬/২০২৩ সকাল), ফাহমিদা খাতুন; রোলঃ ৫১০০৪৮৬২৬ (মৌখিক পরীক্ষাঃ ৩১/৬/২০২৩ বিকেল)। দুদকে এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ জমা পড়েছে। উক্ত আবেদনে এদের ছাড়াও আরো অসংখ্য প্রার্থীর কাছ থেকে পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগে পরিচালক (প্রশাসন) খান মো. রেজাউল করিমকে বদলী করে মন্ত্রনালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর রেজাউল এর জায়গায় এ এইচ এম লোকমানকে বসানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই লোকমানই রোজাউল করিম, আবু নূর সামসুজ্জামান ও আবু তাহের সানাউল্লাহ নূরীগংদের নিয়োগ বাণিজ্যের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।

এই ব্যাপারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের একান্ত সহকারী এনামুল হকের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, আমি ছাড়া আমার পরিবারের কোন সদস্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকরি করে না। কিন্তু সূত্র ও অনুসন্ধান বলছে ভিন্ন কথা। এনামুল হকের বড় বোন নার্গিস সুলতানা শরীয়তপুরের কোদালপুর মা ও শিশু পরিবার কল্যান কেন্দ্রের পরিচ্ছন্নকর্মী পদে কর্মরত। এছাড়াও তার আপন ছোটবোন ও ভাতিজী রাজধানী ঢাকার মিরপুরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মাজার রোড লালকুঠি মা ও শিশু হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও শরীয়তপুরের অসংখ্য ব্যক্তিকে টাকার বিনিময়ে চাকুরী দিয়েছেন।

          নিয়োগ বাণিজ্যের অন্যতম সহযোগী পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের একান্ত সহকারী এনামুল হক

পারিবারিক জীবনে কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বড় হওয়া এনামুল হকের বাবা কাঠমিস্ত্রী আঃ মান্নান ভুইয়ার সন্তানেরা আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। গ্রামের বাড়ি বড় কালীনগর, নাগেরপাড়া, গোসাইরহাট; শরীয়তপুরে বর্তমানে বিশাল এক অট্রালিকা নির্মানাধীন। গ্রামের সাধারণ লোকজন হঠাৎ করে এই অট্রালিকা নির্মান দেখে হতভাগ। কারন আঃ মান্নান ভুইয়ার সন্তানেরা জীবন-জীবিকায় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী। একমাত্র এনামুল হক দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে মহাপরিচালকের একান্ত সহকারী হিসেবে কর্মরত থাকার সুবাদে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।
এই ব্যাপারে এনামুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমিও এসব অভিযোগের ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। আমার বিরুদ্ধে আনীত এসকল অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমাকে বিতর্কিত করতেই এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে।’ কিন্তু অনুসন্ধান বলছে অন্য কথা। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালকের সাথে সখ্যতা থাকার সুবাদে এনামুল হক গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
এছাড়াও কর্মচারী ইউনিয়নের কয়েকজন নামধারী নেতা বর্তমানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরা প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর অনুসারী বলে পরিচয় দিলেও বাস্তবে মূলত বিএনপি-জামাতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে অধিকতর দুদক ও বিচারবিভাগীয় তদন্ত করলে দুর্নীতির এই মূল উৎপাটন করা সম্ভব।’ তাদের মতে, কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং নানাবিধ অনিয়মের কারণে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সুনাম ক্ষুন্ন হতে হতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এখানে ভোতা হয়ে গেছে। যা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য, রাজধানীর কলেজগেটে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বিপরীতে একটি মসজিদ আছে। এই মসজিদের পাশে যে ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে সেটি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বাজেট বরাদ্দ বিভাগের মাযহারুল ইসলামের বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও লজিস্টিক শাখায় প্রায় ২০ লাখ ইনজেকশন, কোটি কোটি টাকার ঔষধ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি এবং ইনজেকশন মেয়াদোত্তীর্ণ হতে চলেছে।

                                                              নিয়োগ বাণিজ্যের অন্যতম দালাল নূর প্রফেসর

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানুসহ খান মো. রেজাউল করিম, এ এইচ এম লোকমান, এনামুল হক, আবু নূর সামসুজ্জামান ও আবু তাহের সানাউল্লাহ নূরী’র সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। এদের অনেকে মোবাইলও রিসেভ করেনি।

আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের সংবাদ সম্মেলন:

সম্প্রতি এই অধিদপ্তরের পরিদর্শিকা (প্রশিক্ষণার্থী) নিয়োগ পরীক্ষায় ৯০ ভাগই দুর্নীতি হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় ১ হাজার ৮০ জন চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে ৯৭২ জনকে অর্থের বিনিময়ে পাশ করিয়ে দেয়া হয়েছে। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই চক্রের মূল হোতা ছিলেন নিয়োগ পরীক্ষায় বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সভাপতি ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন)। সম্প্রতি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. সুফি সাগর সামস এসব অভিযোগ করেন। এ সময় লিখিত বক্তেব্যে তিনি বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (প্রশিক্ষণার্থী) নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ও বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সভাপতি খান মো. রেজাউল করিম এবং অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পার) ও বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সদস্য সচিব আবু তাহের মো. সানাউল্লাহ নূরীর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট ৪৬ জেলার বিভিন্ন পরীক্ষার্থীদের থেকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন করেছে। সিন্ডিকেট পরীক্ষার খাতা জালিয়াতির মাধ্যমে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ নম্বর দিয়েছে। এভাবে ১ হাজার ৮০ জন চাকরিপ্রত্যাশী প্রার্থীর মধ্যে ৯৭২ জনকে অর্থের বিনিময়ে পাশ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ যাতে অনিয়ম প্রমাণ করতে না পারে, সেজন্য লিখিত পরীক্ষার পরিবর্তে ৭০ নম্বর টিকচিহ্ন এবং মৌখিক পরীক্ষায় ৩০ নম্বর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এছাড়া ১৮ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও আর্থিক লেনদেন সফল করতে পরীক্ষার তিন মাস পর ফলাফল ঘোষণা করা হয়। প্রকৃত মেধাবীদের বঞ্চিত করছে। লিখিত বক্তেব্য তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে একাধিক প্রার্থী এবং অভিভাবক আইন ও মানবধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের কাছে অভিযোগ করছে। তারা বলছে, সিন্ডিকেট লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে পরীক্ষার আগেই এক থেকে দুই লাখ টাকা নেয়। অনেককে চূড়ান্ত নিয়োগের আশ্বাস দিয়ে ৮-১০ লাখ টাকা নিয়েছে। এ বিষয়ে পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তরে এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব বরাবর অভিযোগ করা হয়। তথ্যপ্রমাণসহ দুর্নীতি দমন কমিশনেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে চাকরিপ্রত্যাশী ভুক্তভোগী লুৎফুন্নাহার বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষায় আমার রোল ৫১০১৯০৩২৭। প্রথমত, আমি নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করেছি। দ্বিতীয়ত, আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ায় কোটা আছে, আমার মা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চাকরি করায় পোষ্য কোটা রয়েছে।

সময়ের বাণী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *